হরিরামপুরের দুস্থরা পেল খাদ্য সহায়তা

গত ১৫ বছরে তিন দফায় পদ্মা নদীর ভাঙনে জহিরুল ইসলাম চার বিঘা জমি আর বসতভিটা হারিয়ে বছর পাঁচেক আগে আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধে। মানিকগঞ্জের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের এই কৃষক এখন পুরোপুরি দিনমজুর। উপজেলার ঝিটকা বাজারে মুটেগিরি করে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু করোনা বিপর্যয়ে হাট-বাজারে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় অথই সাগরে পড়েন। সন্তানদের জন্য এক বেলা খাবার জোটানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে ভগ্নস্বাস্থ্যের এই দিনমজুরের। এমন কঠিন সময়ে হাতে পেলেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের পাঠানো উপহারের খাদ্যসামগ্রী। খাদ্যসামগ্রীতে বোঝাই প্যাকেট মাথায় নিয়ে জহিরুল হাঁটতে হাঁটতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘উনারে (সায়েম সোবহান আনভীর) আল্লায় যেন অনেক বড় হায়াত দেয়। আমার মতো গরিব অসহায়গো সাহায্য করার তৌফিক দেয়। আল্লায় যেন উনার সব মুশকিল আসান করে।’

গতকাল সোমবার জহিরুলের মতোই হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের দেড় হাজার অসহায় দুস্থ মানুষের হাতে সায়েম সোবহান আনভীরের উপহারের খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নদীভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষ। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া খাদ্য সহায়তায় প্রত্যেকে পেয়েছে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা।

করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গতকাল দুপুর ১২টায় হরিরামপুরের গোলাম মহিউদ্দিন-কমল হাই স্কুল প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহারসমগ্রী তুলে দেওয়া হয় দুস্থ মানুষের হাতে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাত হায়দার। মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বদরুল ইসলাম বাবুল, কাজী টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান জনি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের স্থায়ী সদস্য আমিনুল ইসলাম, মো. মারুফ কাজী প্রমুখ।

বক্তব্যে সাজ্জাত হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সায়েম সোবহান আনভীর এই দুর্যোগ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শুধু মানিকগঞ্জে নয়, সারা দেশেই তাঁর এই মানবিক কর্মসূচি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

সাজ্জাত হায়দার আরো বলেন, দুস্থদের সহায়তার পাশাপাশি দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। সাজ্জাত হায়দার জানান, গোলাম মহিউদ্দিন-কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য লেখাপড়ার সরঞ্জাম উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সায়েম সোবহান আনভীর।

গোলাম মহিউদ্দিন তাঁর বক্তব্যে সায়েম সোবহান আনভীরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বেশির ভাগই নদীভাঙনপ্রবণ। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সায়েম সোবহান আনভীর ব্যক্তিগতভাবে এবং তাঁদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই অসহায়দের পাশে থাকে। যেকোনো দুর্যোগে তাদের সহায়তা পেয়ে আসছে এই জনপদের অসহায় দুস্থরা। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার মানিকগঞ্জ সদরে তিন হাজার দুস্থকে একই ধরনের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার আরো দেড় হাজার পরিবারকে এই উপহার দেওয়া হবে।
Source: Kaler Kantho

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.