বাজে রেফারিংয়ে বন্দী শেখ রাসেল

ফুটবলে একটা দলের সময় খারাপ যেতেই পারে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা জিততে ভুলে গিয়েছিল জায়ান্ট লিভারপুল। ৩০ বছর পর তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরও সময়টা ভালো যাচ্ছে না। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা মোহামেডানের কথা ভাবুন। ভালোমানের দল গড়তে না পারায় পেশাদার লিগে শিরোপা জেতাটা এখনো তাদের স্বপ্ন থেকে গেছে। ফুটবলে এমন হতেই পারে। তবে রেফারির পক্ষপাতিত্বের শিকার হয়ে যদি শিরোপা রেসে টিকে না থাকে এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কি হতে পারে। পেশাদার লিগে বিভিন্ন ক্লাব কমবেশি পক্ষপাতিত্বের শিকার হলেও দেশের জনপ্রিয় ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র টানা কয়েক মৌসুম ধরে বাজে বা পক্ষপাতিত্বের বৃত্তে বন্দী আছে। রেফারিং নিয়ে এ ক্লাব একাধিকবার বাফুফের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি।তিন মৌসুমে কত বিতর্কিত সিদ্ধান্তে শেখ রাসেল মূল্যবান পয়েন্ট হারিয়েছে তা হিসাব মেলানো মুশকিল। এবার যেন রেফারিরা শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছেন কোনোভাবে শেখ রাসেলকে শিরোপা রেসে থাকতেই দেবে না। বাস্তবে তার প্রমাণও মিলছে। পেশাদার লিগে শেখ রাসেলের জ্বলে ওঠার পথটা নিস্তেজ করে দিচ্ছে প্রতিপক্ষ দলের পক্ষ নিয়েই। আক্রমণ থেকে যেখানে শেখ রাসেল নিশ্চিত গোল করবে সেখানেই অযথা অফসাইড ও ফাউল ধরা হচ্ছে। লিগে দলটি সুবিধা করতে পারছে না বলে অনেকে বলছেন- কোটি কোটি টাকার গড়া শেখ রাসেল একি করছে?

আসলেও দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে শেখ রাসেলের যে শক্তি তাতে প্রথম পর্বেই এত পয়েন্ট হারানোটা বিস্ময়কর। কিন্তু দলের ফুটবলাররা তো মাঠে বড় অসহায়। যখন দেখছে পারফরম্যান্স প্রতিরোধে রেফারিরা পক্ষ নিচ্ছেন তখন কি মনোযোগ ও টিমস্পিরিট থাকে। এবার শেখ রাসেল রেফারির শিকার হয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। বিতর্কিত রেফারিংয়ের পরও শেখ রাসেল তাদের ফুটবলারদের নিয়ে বৈঠক করে। কোচ ও ম্যানেজারও বদল করা হয়। সব ভুলে শেখ রাসেল নতুনভাবে জেগে উঠবে এটাই ছিল শপথ। জ্বলে উঠে শেখ রাসেল যখন জিততে যাচ্ছে, সেখানেও বিতর্কিত রেফারিংয়ে জয়ের বদলে ড্র করতে হলো।

গতকাল শুক্রবার রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে শেখ রাসেল মুখোমুখি হয় পুলিশ ফুটবল দলের বিপক্ষে। ম্যাচে শুরু থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুর শিষ্যরা। সহজ সহজ সুযোগ হাতছাড়া করায় প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি শেখ রাসেল। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায়। ৪৯ মিনিটে জুয়েলের গোলে এগিয়ে যায় তারা। এরপর থেকেই শুরু হয় বিটুরাজের বিতর্কিত বাঁশি। দুই সহকারী রেফারিও শেখ রাসেল আক্রমণে গেলেই অফসাইডের পতাকা উড়াচ্ছে। গোল করে শেখ রাসেল যেন অন্যায় করে ফেলল।

৬৭ মিনিটে যা ঘটল যা ফুটবলের জন্য বড় লজ্জা হয়ে থাকবে। পুলিশের ঈসা ফয়সাল আক্রমণে গেলে স্বাভাবিকভাবে তাকে ডি-বক্সের ভিতর আটকানোর চেষ্টা করেন রহমত মিয়া। দু’জন বল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। এ সময় ঈসা শরীর ব্যালেন্স রাখতে না পারায় মাটিতে পড়ে যান। রহমত ধাক্কা দেওয়া তো দূরের কথা তার শরীর স্পর্শ করেনি। অথচ রেফারি বিটুরাজ পুলিশকে পেনাল্টি উপহার দেন।

সেই বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে হারতে যাওয়া ম্যাচ ড্র করে পুলিশ। রেফারির এমন সিদ্ধান্তে দর্শকরাও হতবাক হয়ে যান। সবচেয়ে বড় কথা পুলিশের খেলোয়াড়রা পেনাল্টির দাবিও করেনি সেভাবে। একটা ক্লাব কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটবলের এমন দুর্দিনেও দল গড়ে। সত্যি বলতে ক্লাবগুলোই তো প্রকৃতপক্ষে দেশের ফুটবলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখন যদি তাদের সব আশা এভাবে ভেঙে দেয় তাহলে কী উৎসাহটা থাকবে? সবচেয়ে বড় কথা বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেও বলেছেন রেফারিরা দুর্বল বাঁশি বাজাচ্ছেন। এতে ফুটবলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তিনি তো বিদেশি রেফারি আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তারপরও দেখা মিলছে না কেন? তাহলে কি তিনিও সিন্ডিকেটের শিকার। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদীও বড় মানের ফুটবলার ছিলেন। তিনিও কী বোঝেন না পক্ষপাতিত্বটা দলের কতটা ক্ষতি হয়?

পক্ষপাতিত্ব রেফারিং নিয়ে গুঞ্জনও রয়েছে। বাফুফের কাছে রেফারিদের বকেয়া নাকি ৬০ লাখ টাকারও বেশি। তা তারা পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে লেনদেনের মাধ্যমে পক্ষপাতমূলক বাঁশি বাজাচ্ছেন। এ ব্যাপারে রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হাজী মো. ইব্রাহিম নেসার বলেন, ‘বড় অংকের টাকা বকেয়া রয়েছে তা স্বীকার করছি। লেনদেনের কথা আমিও শুনেছি। তবে প্রমাণ তো থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা ম্যাচে রেফারি বা সহকারী রেফারি কারা থাকবে তা কিছু ক্লাব আগেই জেনে যাচ্ছে। এখানে কিছু ঘটলেও আমরা তো আর জানছি না। তবে নিশ্চয়তা দিয়ে আমরা বলছি পুলিশ সত্যিকার পেনাল্টি পেয়েছে কিনা তা তদন্ত করব। যদি এর ভিতর কোনো কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় রেফারিকে অবশ্যই বড় শাস্তি দেওয়া হবে।’

 

Source: bd-pratidin

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.