মধুমতীর তীরে খুশির বান

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে অসচ্ছল দিন কাটাচ্ছিলেন মধুমতী তীরের বহু মানুষ। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড। আট হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী এবং দুই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় এসব আয়োজন ছিল মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী ঘিরে।

এ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সবার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদেরও আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নেতারা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।

জানা গেছে, পুরো আয়োজনের নির্দেশনায় ছিলেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীর। ক্লাবের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া পরিচালক শেখ সালেহ জামান সেলিম, পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম, মাকসুদুর রহমান, সদস্য মেজর (অব.) শেখ মো. মিজানুর রহমান ও মো. আমিনুল ইসলাম। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, দুই লিটার সয়াবিন তেল এবং এক কেজি করে ডাল ও লবণ। দৃষ্টিনন্দন স্কুলব্যাগের সঙ্গে ছিল ছয়টি খাতা, একটি করে পেন্সিল বক্স, কলম, পেন্সিল, শার্পনার, ইরেজার ও স্কেল।

কোটালীপাড়ায় সহায়তা পেল সাত হাজার পরিবার : কোটালীপাড়া উপজেলায় ছয় হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী এবং এক হাজার শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। রবিবার সকাল থেকে শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন উপকারভোগী ব্যক্তিরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে তাঁরা অবস্থান করেন শিল্পকলা একাডেমির সামনের মাঠে। পৌনে ১১টায় মঞ্চে ওঠেন নেতারা। শোকের মাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ক্রীড়া পরিচালক শেখ সালেহ জামান সেলিম বলেন, ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। শিশু শেখ রাসেলকে পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়নি। কিন্তু চাইলেই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুছে ফেলা যায় না। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড শিশু শেখ রাসেলকে দেশে-বিদেশে তুলে ধরার অনন্য প্রয়াস।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, বেগম মুজিব পাশে না থাকলে বঙ্গবন্ধু কখনো জাতির পিতা হতে পারতেন না। এই মহীয়সী নারীর অবদান জাতি কখনো ভুলতে পারবে না।

কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, এ জন্য আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাঁরা এর আগেও বিভিন্ন সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন বলেন, বেগম মুজিব একজন মহীয়সী নারী। তিনি পাশে না থাকলে বঙ্গবন্ধু কখনোই জাতির পিতা হতে পারতেন না।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও পৌর মেয়র হাজি মো. কামাল হোসেন শেখ। উপস্থিত ছিলেন কুশলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন প্রমুখ।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয় কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

টুঙ্গিপাড়ায় দোয়া ও সহায়তা : টুঙ্গিপাড়ায় বিতরণ করা হয় দুই হাজার প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী এবং এক হাজার শিক্ষা উপকরণ। দুপুরে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাড চত্বরে বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এসব উপকরণ হস্তান্তর করা হয়। এরপর জাতির পিতার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে জোহর নামাজের পর দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। শেষে জাতির পিতার সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

টুঙ্গিপাড়ার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার খায়ের, উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক তুতুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ বাবুল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফোরকান বিশ্বাস প্রমুখ।

বিকেল ৩টায় শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয় শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় দৃষ্টিনন্দন স্কুলব্যাগসহ শিক্ষা উপকরণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মানব রঞ্জন বাশাড়।

সব শেষে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা বাসস্ট্যান্ডে খাদ্যসামগ্রী এবং শেখ রাসেল শিশু নিকেতনে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Source: Kaler Kantho

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.